রাজধানীসহ সারাদেশে ফের গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন মামলায় আসামি করা হচ্ছে তাঁদের। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। কোথাও কোথাও ঘটেছে পুরোনো মামলায় আটকের ঘটনাও। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভয়ভীতির মধ্যেই দিনাতিপাত করছেন। অনেকের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তল্লাশির ঘটনাও ঘটছে। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি কিংবা এলাকাছাড়া।
জানা গেছে, বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের সবমিলিয়ে প্রায় ৫৮৬ জন নেতাকর্মী কারাবন্দি। আবার গত ১৫ দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নীরবে দেওয়া হচ্ছে মামলা। যেসব মামলাকে ‘গায়েবি মামলা’ বলে দাবি দলটির। বিগত এক মাসে ত্রিশের অধিক এ রকম মামলা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ঢাকাতেই ১৫টি মামলা হয়েছে বলে নেতারা জানান। হঠাৎ করে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বিএনপির হাইকমান্ড।
ইতোমধ্যে সারাদেশে ‘গায়েবি’ মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে গত শনিবার রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দলটি। একই দাবিতে আগামী ১৯ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলনের ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যা সারাদেশে একেক দিন একেক বিভাগের কয়েকটি জেলা ও মহানগরে পালিত হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো সেই একই প্রক্রিয়ায় পুরোনো পথে হাঁটতে শুরু করেছে সরকার। এখনও অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মূলত গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত এবং নেতাকর্মীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সম্প্রতি ‘গায়েবি’ মামলা শুরু করেছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীর নামে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৪৩টির অধিক মামলা এই অবৈধ সরকার দায়ের করেছে। আসামির সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১ এর অধিক। তার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই ২ হাজার ৮৩০টি মামলা। ঢাকাতেই ১৫শ মামলা ইতোমধ্যে বিরোধী মত ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুক্ত মতপ্রকাশের মানুষের বিরুদ্ধে করেছে। তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন দানা বাঁধছে, ঠিক সে সময় তারা মামলা-হামলা দিয়ে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করতে চায়। এ দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেন কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেন। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে– আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা আদালতে রাজনৈতিক মামলায় নেতাকর্মীরা জামিন নিতে গেলে আদালত নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনা বাড়ছে। গত ৮ মে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ নারায়ণগঞ্জের ১৩ নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর এক দিন পর গত ৯ মে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৮৫ জন নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল খুলনার ডুমুরিয়া থানার নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানসহ ৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর পর গত বুধবার তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন। এ ছাড়া মে মাসের শুরুতে সিলেটে বিভিন্ন মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫০ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবী এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, মামলার বিবরণের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। ওই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এটি গায়েবি মামলা।
এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় দলটির যেসব নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি আছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন– বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী, বিএনপি নেতা মিয়া নূরুদ্দিন অপু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সহসভাপতি ইউসুফ বিন জলিল কালু, সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও আলী আকবর চুন্নু, ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের বর্তমান আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহিন, ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদ, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, হামলা নির্যাতন এবং পাইকারি গ্রেপ্তার অভিযান বেড়ে যায়। বিএনপির মৃত ও অসুস্থ নেতা এবং বিদেশে অবস্থান করছেন এমন নেতাদের বিরুদ্ধেও গায়েবি মামলা দিয়েছে আওয়ামী সরকার।
Leave a Reply