নেত্রকোনার কৃষকদের মধ্যে বিক্রির জন্য সার গুদাম থেকে মাঠ পর্যায়ে না নিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছিল। নেত্রকোনা থেকে সার পাচারের সময় ময়মনসিংহে দুই ট্রাকবোঝাই সারসহ চার পাচারকারীকে আটক করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গতকাল সোমবার রাতে ডিবি অভিযান চালিয়ে ৬০০ বস্তা সরকারি টিএসপি সারসহ পাচারকারীদের আটক করে। পরে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আজ মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে সার পাচার হওয়ার বিষয়ে কৃষি বিভাগ কোনো দায় নিতে চাইছে না।
পুলিশ জানায়, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুটি ট্রাকে বোঝাই করা ৬০০ বস্তা সরকারি টিএসপি সারসহ চার পাচারকারীকে আটক করা হয়। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ আলী, চন্দন কুমার বিশ্বাস বিকাশ, মো. রব্বানী ইসলাম ও মো. জয়নাল সরকার। সবার বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। ওই সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬০০ বস্তা সরকারি টিএসপি সার, প্রতিটি বস্তার গায়ে বিএডিসি টিএসপি ট্রিপল সুপার ফসফেট, উৎপাদনকারী দেশ মরক্কো, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, ওজন ৫০ কেজি লেখা রয়েছে। সেই সঙ্গে জব্দ করা হয় দুটি ট্রাকও। উদ্ধার হওয়া সারের মূল্য অন্তত ছয় লাখ টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আটকরা পুলিশকে জানান, গত রোববার সারাদিন নেত্রকোনা জেলার বিএডিসি সরকারি সার গুদাম থেকে ৬০০ বস্তা সার দুটি ট্রাকে বোঝাই করা হয়। নেত্রকোনা জেলার উপজেলা পর্যায়ের নির্ধারিত ২৮ ডিলারের কাছে পাঠাতে বিএডিসি সার গুদাম থেকে গত রোববার ৬০০ বস্তা টিএসপি সার উত্তোলন হয়। পরিবহন ঠিকাদার তোফাজ্জল হোসেন সার উত্তোলন করে নির্দিষ্ট ডিলারদের কাছে পৌঁছে না দিয়ে পাচারের চেষ্টা করেন। সার ডিলার, পরিবহন ঠিকাদার ও সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করে।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সার উত্তোলনের পর তা কৃষক পর্যায়ে না গিয়ে পাচার করা হচ্ছিল। পরিবহন ঠিকাদার তোফাজ্জলের নেতৃত্বে কাজটি হয়। এর সঙ্গে আরও কারা জড়িত, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। তিন আসামির রিমান্ড চাওয়া হলেও মঙ্গলবার তাঁদের রিমান্ড শুনানি হয়নি।’
তবে নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলার সার ডিলারদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সার পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করেন। জেলার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটী ইউনিয়নের পাগলা বাজারের আবদুল হাই ট্রেডার্স ও হাবিব ট্রেডার্স গত রোববার ৩৮ বস্তা করে টিএসপি সার উত্তোলন করে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক দুই ভাই। হাবিব ট্রেডার্সের মালিক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সার উত্তোলন করে আমার গুদামে রোববারই এসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’ জেলার বারহাট্টা সার ডিলার মইন উদ্দিনও নিজের বরাদ্দের সার পেয়েছেন বলে জানান। নেত্রকোনা সদরের সার ডিলার মনোরঞ্জন সরকার এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ডিলাররা সার উত্তোলন করে নিজের গুদামে নিয়ে রাখার পর সংশ্নিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসে আগমনী বার্তার চিঠি দেবেন। চিঠি পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে সার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হলে সেই সার বিক্রি করতে পারেন ডিলার।
নেত্রকোনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াছমীন বলেন, ‘টিএসপি সার উত্তোলনের কোনো খবর আমরা পাইনি।নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বার্তা পেয়ে ডিলারের গুদামে গিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সার মজুত পাওয়া যায়।’
নেত্রকোনা বিএডিসির উপসহকারী পরিচালক জীবন সরকার বলেন, ‘নেত্রকোনা থেকে অন্যত্র সার নিয়ে যাওয়ার সময় ময়মনসিংহে আটক হয়েছে শুনেছি। তাদের কাছ থেকে সার উত্তোলন করে নেওয়ার পর তাদের আর দায় থাকে না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান কিছু অসংগতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সার আটকের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের বিষয়ে উপজেলা থেকে সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
Leave a Reply