উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ সপ্তাহজুড়ে দাপট দেখানোর পর গত দু’দিন অনেক জেলায় রোদ ওঠায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। কিন্তু আবারও শুরু হয়েছে শীতের দাপট। গত বুধবার দেশের ১৩ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও আরও বিস্তৃত হয়েছে এর আওতা। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল বৃহস্পতিবার মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে ২২ জেলার ওপর দিয়ে। শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিয়েছে ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়েও। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ আরও নেমেছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায় ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলা দিনপঞ্জি অনুযায়ী, আজ পৌষের ২৯ তারিখ। পৌষের শেষ প্রান্তে এসে যেন মাঘের হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘন কুয়াশা আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের দেখা না মেলায় দিনেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে সেচনির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কাদাপানির ভেতরে কাজ করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষিশ্রমিকরা।
২০০২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে চলতি ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া অধিদপ্তরে সংরক্ষিত ২২ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় শীত মৌসুমে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রোববার সকালের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের ওপর হালকা (১০ মিলিমিটারের কম) বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং বৃষ্টিপাতের পর ১৬ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে তীব্র শীত পড়তে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এবার শীত মৌসুম ফেব্রুয়ারিজুড়েই থাকতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
ঘন কুয়াশায় ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় :এদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমানের শিডিউল বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রী ও তাঁদের স্বজনরা। একটি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতায় অবতরণ করে। আরেকটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সিলেটে চলে যায়। বিমানবন্দরের টেকনিক্যাল সাইটের পরিচালক মাহবুব রহমান সমকালকে বলেন, ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ভারতের কলকাতায় অবতরণ করে। অভ্যন্তরীণ রুটের একটি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে সেগুলো ঢাকায় আসে। কুয়াশার কারণে বিমান উড্ডয়ন-অবতরণেও বিঘ্ন ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ইজতেমা শুরুর বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন ফ্লাইটের যাত্রীদের দ্রুত বিমানবন্দর পৌঁছাতে বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের উত্তর পাশের গেট দিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা যায়, কুয়াশা আর সড়কে তীব্র যানজটের কারণে উড়োজাহাজ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। গতকাল ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা বিমানবন্দরে ব্যাহত হয় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১২টি ফ্লাইটের শিডিউল ব্যাহত হয়। ছয়টি ফ্লাইট সময়মতো নামতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ আকাশে চক্কর দিয়ে সময় পার করেছে। সকাল সাড়ে ১০টার পর স্বাভাবিক হয় ফ্লাইট ওঠানামা। অনেক ফ্লাইটও দেরিতে ছেড়ে গেছে।
Leave a Reply