বর্তমান নিউজ.কমঃ
১৯৭১ সালে ২৯ নভেম্বর এই দেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ প্রত্যন্তঅঞ্চল বক্তাবলী পরগনার ২২টি গ্রামে। ২৯ নভেম্বর বর্বরোচিত ওই হামলায় পাকিস্তানির হানাদার বাহিনীর হাতে ১৩৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী কিংবা শিশু। রাজাকার, আল-বদররা জ্বালিয়ে দিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম।
মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে ২৯ নভেম্বর দিনটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য বেদনাবিধুর দিন। স্বাধীনতাযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে এত মানুষ হত্যার ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। বক্তাবলীর মানুষ শত শত মুক্তিযোদ্ধার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। সেই সঙ্গে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে পালিয়ে আসা শত শত পরিবারের আশ্রয়স্থল ছিল বক্তাবলী। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র ১৭ দিন আগে ঘটে বক্তাবলীর হৃদয় বিদারক হত্যাযজ্ঞ।
স্বজন হারানোর ব্যথা ও কষ্ট নিয়েও শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতি বছরই পালিত হয় এই দিবসটি। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীবেষ্টিত বক্তাবলী এলাকা মুক্তিযুদ্ধের সময় পরগনা ছিল। শষ্যভান্ডারখ্যাত বক্তাবলীতে ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর ভোরে হানা দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। কুয়াশাঘেরা ওইদিন সুবেহ সাদেক শুরু হয় পাকিস্তানিদের গুলির শব্দে। দুটি নদীর পাড়ে গানবোট নিয়ে কয়েক পল্যটুন পাক সেনা হামলে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই বক্তাবলি অঞ্চলে। ২২টি গ্রাাম থেকে নিরীহ ১৩৯ জনকে ধরে এনে নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীনগর গ্রামে স্তুপ করে রাখা হয়। কারও কারও লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। ২২টি গ্রামের বাড়িঘর গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী।
ঘটনার দিন তথা ২৯ নভেম্বর ছিল প্রচন্ড শীত। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল পুরো এলাকা। নদী বেষ্টিত হওয়ায় কুয়াশা ছিল অনেক বেশি। ভোরের দিকে হঠাৎ করেই পাক বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
পরে তারা একত্রে পাক বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা একটানা যুদ্ধ চালায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
তাই এই দিনটি শোক দিবস বা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বক্তাবলিবাসী । শহীদ পরিবার, স্কুল- মাদরাসা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে থাকে। বক্তাবলীর শহীদ ১৩৯ জনের বেশির ভাগ মানুষকে সমাহিত করা লক্ষ্মীনগর কবরস্থানকে বধ্যভূমি ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে।
Leave a Reply