বর্তমান নিউজ.কমঃ
পুলিশিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং জনতার সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে প্রতিটি থানায় ‘ওপেন হাউজ ডে’ নামে জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রমের নির্দেশ থাকলেও ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তা করতে হচ্ছেন ব্যর্থ। এর ফলে ওসির ব্যর্থতায় ফতুল্লায় বেড়েছে খুন, মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও কিশোরগ্যাং সহ একাধিক অপরাধ সেই সাথে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অপরাধীরা।
সাধারণত পুলিশিং সেবা কতটুকু সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছে তা জেনে, সকলের মতামত নিয়ে জনগনের সেবার মান আরও বাড়াতে প্রতিটি এলাকার সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে মাসে একদিন থানায় বৈঠকের মাধ্যমে ‘ওপেন হাউজ ডে’ নামে জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার আয়োজন করবে পুলিশ। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের অভিযোগ-পরামর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন। কোন ভুক্তভোগী তাঁর কাঙ্খিত সেবা সঠিক ভাবে পেয়েছেন কি-না তা এখানে সবার সম্মুখে পর্যালোচনা করা হবে। কতজন সেবা বঞ্চিত ভুক্তভোগীদের কথা শুনে তাদের সেবা দিতে পেরেছে তার উপর নির্ভর করে এই অনুষ্ঠানের সফলতা।
যেখানে চার মাস যাবত থানায় ‘ওপেন হাউজ ডে’ নামে কোন জবাবদিহিতা অনুষ্ঠানই হচ্ছে না সেখানে অনুষ্ঠানের সফলতায় আসবে কিভাবে আর পুলিশের সেবার কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করবে কিভাবে। ফতুল্লাবাসী এখন অনেকটাই ভূলতে বসেছে ফতুল্লা মডেল থানায় ‘ওপেন হাউজ ডে’ নামে কোন জবাবদিহিতামূলক অনুষ্ঠান হয়।
জানা যায়, ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রেজাউল হক গত ১৪ মে ফতুল্লা মডেল থানায় যোগদানের পরেরদিন ১৫ মে ফতুল্লা মডেল থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয় তাও ঘরোয়া পরিবেশে। তারপর থেকে চার মাস হয়ে গেলো এখনো পর্যন্ত ফতুল্লা মডেল থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যান্য থানা গুলো নিয়মিত তারিখেই অনুষ্ঠিত হয়ে চলছে ওপেন হাউজ ডে অথচ ফতুল্লা মডেল থানায় দেখা যাচ্ছে না তার কোন চিহ্ন। এতে ফতুল্লায় আবারো বেড়ে চলছে অপরাধ। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অপরাধীরা। উন্মূক্ত আলোচনার ভয়ে অনেক অপরাধী মাথা ডাকা দিলেও এখন ‘ওপেন হাউজ ডে’ না হবার কারণে আবারো তারা আসল অবস্থায় চলে এসেছে।
কিছু কিছু কার্যক্রম পুলিশকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। পুলিশ হয়ে উঠেছিল জনগণের বন্ধু, বিপদের সঙ্গী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে সৌহার্দে ভাটা পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। অযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম করা ও ওসির ব্যর্থতা উভয়কেই মনে করছেন।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রেজাউল হক ফতুল্লা থানায় যোগদান দেবার পরে একের পর এক ঘটে যাচ্ছে খুন। ২৫ জুন ফতুল্লা রেলস্টেশনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাকিব, ২৬ জুলাই চর কাশিপুরে কুঁপিয়ে হাশেম মোল্লা, ৩০ জুলাই রাতে দেওভোগ মাদ্রাসা রোডের শেষ মাথায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মেহেদী হাসান, ১১ আগস্ট দিবাগত রাত তিনটায় চাঁনমারি এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে দুলাল, ১৪ আগস্ট ভোরে ফতুল্লার পঞ্চবটি মেথরখোলা এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাইফুল, ১৬ আগষ্ট কুতুবপুরের মধ্য রসুলপুর এলাকায় স্বামী রুবেল মিয়ার হাতে মোসাম্মৎ ফারজানা বেগম সহ একাধিক খুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ১৩ জুন ফতুল্লার তক্কারমাঠ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্বার করা হয়।
এদিকে ফতুল্লা, কাশিপুর, বিসিক এলাকা, হাটখোলা, মাসদাইর, ইসদাইর, চানমারি, পিঠালিপুল, ওয়াবদারপুল, গাবতলি, সস্তাপুর, লামাপাড়া, কাঠেরপুল, তক্কারমাঠ, শিয়াচর, পিলকুনি, নন্দলালপুর, বক্তাবলি, পাগলা, ফতুল্লা রেলস্টেশন, দাপা, তালতলা, কুতুবপুর রসুলপুর, শাহী মহল্লা, নয়ামাটি, চিতাশাল, ভূইঘর, জালকুড়ি, দেলপাড়া, মাহমুদনগর সহ একাধিক এলাকায় কিশোরগ্যাংয় ও মাদকের উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
বিগত চার মাস ধরে ‘ওপেন হাউজ ডে’ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রেজাউল হক। তার ফলস্বরূপ ফতুল্লায় বেড়ে চলেছে মারামারি, খুন, নারী নির্যাতন, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, কিশোরগ্যাং ও মাদক। এর থেকে রেহায় পেতে প্রতিমাসে থানায় বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে উন্মুক্তভাবে সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা ও ভুক্তভোগীদের সমস্যার কথা নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে অনেকটা দমানো সম্ভব ফতুল্লা থেকে বিভিন্ন অপরাধের।
ওপেন হাউজ ডে না হওয়ায় বর্তমান ফতুল্লা থানা এলাকাগুলোতে বেড়েছে খুন, কিশোরগ্যাং ও মাদক এই প্রশ্নের জবাবে ওসি রিজাউল হক এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
Leave a Reply