রণজিৎ মোদক
শরৎ বাণীর বীনা বাজে কমল দলে। ললিত রাগের সুর ঝরে তাই শিউলী তলে। তাইতো বাতাস বেড়ায় মেতে/কচি ধানের সবুজ ক্ষেতে ঢেউ উঠালে। অশান্ত পৃথিবীর বুকে মহামিলন ও শান্তির বার্তা নিয়ে আসছেন মহামায়া অদ্রা শক্তি জগৎ জননী দূর্গা। চারদিকে আজ আনন্দে সারা পড়েছে। পিত্রালয়ে কন্যার আগমনে একচির চেনা মধুর পরিবেশ। প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে হৃদয় মন। শঙ্ক ঘন্টার ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। আজিকে তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শরিদ প্রভাতে হে মাঃ বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ জ্বলছে অমল শোভাতে। আনন্দের বন্যা চারদিকে। ধূলায় ধরণীতে এসেছেন স্বগের্র দেবী। আনন্দময়ীর আগমনে পুলকিত ধরনী। অন্ধকার ভেদ করে এলে জননী বাজলো তোমার আলোর বেণু আজ প্রভাতে জয় তং দেবী চামুন্ডে জয় ভূতাত্তি হারায়নি।
এরপর থেকেই আমানিশার অন্ধকার নেমে আসে দেব লোকে। আর এই সুযোগে অসুবরাজ মহিষাসুর স্বর্গ রাজ্য দখল করে। স্বর্গের শ্রী বিনষ্টকালী অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেবতারা মত্ত্বধামে হিমালয়ের পাদদেশে বনে জঙ্গলে পাহাড়ে পর্বতে আশ্রায় নিলে স্বর্গের দেবীরা হলেন লাঞ্ছিত। এমতাবস্থায় বড়ই দুঃখে কাটতে লাগলো দেবতাদের জীবনকাল। মহাপ্যরয়ের পর বিষ্ণু সারাবিশ্ব নিজের মধ্যে আকর্ষন করে মহাসমুদ্রের উপর মহামায়ার প্রভাবে নিদ্রালগ্ন ছিলেন। বিষ্ণু নাভিপদ্ম থেকে ব্রাক্ষার সৃষ্টি এবং বিষ্ণুর কর্ণমূল থেকে মধু ও কৈঠভ নামের দুই দৈত্য জন্ম গ্রহন করে। মধু কৈঠভ ব্রক্ষাকে হত্যা করতে এলে বিষ্ণুর শরীর থেকে মহামায়া বের হয়ে মধু কৈঠভকে বধ করেন। মধু এবং কৈঠভের মেদ থেকে পরবর্তীতে মেদেরবড়ি সৃষ্টি হয়েছে। দৈত্যের মেদ থেকে মেদেনরী সৃষ্টি বিধায়, ত্রিগুনের স্বমন্বয় ঘটেছে।
এখানে ত্রিগুনের তারতম্য অনুসারে মানুষের স্বভাবের পার্থক্য হয়ে থাকে। স্বত্ত্বগুনের প্রাধান্য যার মধ্যে, তার স্বভাব হয় শান্ত, চিত্ত থাকে স্থির। আর ভক্তি প্রীতি শ্রদ্ধায় অন্তর থাকে অবিচল। তার সাত্বিক আহার হচ্ছে, ফলমূল ও দুধ। রজোগুণ যার মধ্যে প্রবল, তিনি হন কর্মঠ। তার থাকে উচ্ছাকাঙ্খা প্রতিদ্বন্দী কে পরাভূত করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দূর্র্নিবার প্রয়াস। তমোদগুন জরতা, আলস্য কাপরুষতা, কুরুচি, কুপ্রবৃত্তি কুখাদ্যই তার আহার্য্য হয়ে থাকে। সৎ চিন্তা তার মধ্যে অনুপস্থিত। শক্তি না থাকলে জগতে ন্যায়, ধর্ম কিছুই প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়না। শক্তিহীনের দ্বারা আত্মজ্ঞান লাভ হয়না। উপনিষদ তাই বলেছেন নারায়মাত্মা বলহীনের লভ্য স্বয়ং ভগবান গীতায় শ্রী অজুর্নকে সিক্ত সাধনা করতে বলেছেন দু ক্ষুদ্রং হৃদয় দৌব্বলং ত্যক্তোত্তিষ্ঠ পরন্তপ। এই শক্তি শুধু দেহের নয়, মনের মানসিক শক্তি অর্থ শক্তি, ধন শক্তি দ্রোন শক্তি জনশক্তি, আদি কুল কুন্ডোলিনী শক্তির কথা বলা হয়েছে। জীবনকে স্বার্থ করে তুলতে হলে, সর্ব প্রকার শক্তি অব্যশই প্রয়োজন।
যিনি সকল শক্তি আধার সেই শক্তি ময়ী মহামায়ার কৃপা কোথায় ? দেবতারা স্বর্গ হারা হয়ে বিষ্ণু, ব্রক্ষা ও মহাদেবের নিকট সকল দুঃখ নিবেদন করলেন। দেবতাদের দুঃখ শুনে তাদের দেহ থেকে তেজঃনির্গত হলো।ততোহতি কোনপূর্নস্য চক্রিন্য বদনাওত। নিশ্চইক্রাম মহত্তেজো ব্রক্ষন শঙ্করসংচ” সেই অনুপম তেজোরাশি একত্রে মিলিত হরেয় এক নারী মূর্তি ধারন করলে মহাদেবের তেজে বাজু সকল চন্দ্রের থেকে স্তন্য যুগল ইন্দ্রের তেজে মধ্যদেশ, বরুনের তেজে জঙ্গা ও উরু এবং পৃথিবীর তেজে নিতন্ব, ব্রাক্ষ তেজে দুটি পা সূর্যের তেজে পায়ের আঙ্গুলি বসুগনের তেজে হাতের আঙ্গুলি কুবের তেজে নাসিকা, প্রজাপতির তেজে ত্রিনয়ন প্রাত সন্ধ্যা এবং সায়ং সন্ধ্যার তেজে দুভ্র বায়ুর তেজেদু কর্ণ অন্যাণ্য দেবগনের তেজে শিষা মূর্তি উৎপত্তি হলো। তারপর মহাদেব দিলেন ত্রিমূল, বিষ্ণু দিলেন চক্র, বরুন দিলে শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তি, বায়ু দিলেন ধনুক এবং বানের দ্বারা পূর্র্ন দুটি তুন। ইন্দ্র দিলেন বজ্র ও ঘন্টা, যম দিলো দন্ড, বরুন দিলো পাশ প্রজাপতি ব্রক্ষা রুদ্রাক্ষের মালা কমন্ডল, সূর্য দিলে কিরণ, কাল বা মৃত্যূদেব দিলেন খড়্গ ঢাল, ক্ষীর সমুদ্র উজ্জল হার বস্ত্র দিব্য চূড়া মানি কুন্ডল, বালা শ্বেতবর্ণ অদ্ধচন্দ্র, কেয়ুরবিমল নুপুর কুঠার, সমুদ্র দিলেন পথ, মালা কুবের সুরাপূর্ণ পানপাত্র, বাসুকী নাগ দেব হিমালয় দিলেন সিংহ।
অস্ত্রশস্ত্রে সু সজ্জিতা দেবী অমানিশার অন্ধকার ভেদ করে উজ্জল আলোকে ঊদ্ভাসিত হলেন। অন্যৈরপি সুরেন্দ্রে বীর ভূষনে রায়ুবৈস্তথা। সম্মানিতা নান দেব চ্ছৈ সাট্ট হাসং মহুমুঃ। জয়েতি দেবাশ্ব মুদ্রা তামুচুর সিংহ বাহিনীয়। তুষ্টুর মুনূং শ্চৈনাং ভক্তি নম্রাত্ম মুত্তর্য়ঃ। দেবদেবীগন সিংহ বাহিনীকে লক্ষ্য করে জয়ধ্বনি ভক্তি ভরে শরীর এবং মন নত করে দেবীর স্তব করলেন বিশ্বেশ্বরী ত্বং পরিপাসি বিশ্বং বিশ্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম। বিশ্বে বন্ধ্যার ভবতী ভবন্তি বিশ্বাশ্রয়া যে তুয়ি ভক্তিনম্রাঃ। অমানিশার তিমির অন্ধকার ভেদ করে আলোক উজ্জল দেবীর আগমন। আনন্দময়ীর আগমনে ধরনী ফল ফুলে পুস্পিত হোক শান্তির বারিধারা, বর্ষিত হোক বিশ্বে গড়ে উঠুক ভ্রাতৃত্ব বোধের মিলন মেলা। অন্তরে অন্তরে জেগে উঠুক গভীর দেশ প্রেম।
Leave a Reply