প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভাঙলে বা জোয়ারের পানিতে কোনো এলাকা ডুবলে জরুরি তলব করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের। ভবিষ্যতে ক্ষতি থেকে এলাকার সুরক্ষার কাজও করে প্রতিষ্ঠানটি। সে ক্ষেত্রে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা পাউবো অফিস। অথচ দুর্যোগপ্রবণ কয়রা উপজেলা খুলনার অন্তর্গত হলেও এর নিয়ন্ত্রণ সাতক্ষীরা পাউবোর। ফলে জরুরি প্রয়োজনে কালক্ষেপণ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তিন দিকে নদীবেষ্টিত কয়রার মূল সমস্যা নদী ও বেড়িবাঁধে ভাঙন। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্নিষ্ট দপ্তরের অবস্থান ভিন্ন জেলায় হওয়ায় দুর্যোগের সময় পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ হয়। সার্বক্ষণিক নজরদারি না থাকায় বেশির ভাগ কাজ হয় নিম্নমানের। তাঁদের অভিযোগ, কয়রার বিভিন্ন কাজে সাতক্ষীরা পাউবোয় দাপ্তরিক জটিলতা পোহাতে হয়। প্রকল্পের কাজে সাতক্ষীরার উপজেলা প্রাধান্য পায়। স্বাধীনতার পরে বড় কোনো প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়নি কয়রায়।
দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের কৃষক মনজুর আলম বলেন, পাউবোর কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে সময়ের কাজ সময়ে হয় না। ফলে প্রতি বছর নদী ভাঙনে ফসলি জমি কমছে। মঠবাড়ি গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী শফিকুল গাজী বলেন, পাউবো কর্মকর্তারা না থাকায় বাঁধ মেরামতের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানানো যায় না। দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের ভেসে যায়। চলতি বছরও দু’বার বেড়িবাঁধ ভেঙে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, দপ্তরটি খুলনার অধীন থাকলে যে সুবিধা দ্রুত পাওয়া যেত, এখন তা পেতে অনেক সময় লাগে। প্রয়োজনের সময় পাউবো কর্মকর্তাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। উপজেলাটি খুলনা জেলার অধীনে থাকলে সব দিক দিয়ে সুবিধা হবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) প্রতিষ্ঠিত হলে সাতক্ষীরা-১ ও সাতক্ষীরা-২ বিভাগ করা হয়। দ্বিতীয় বিভাগের আওতায় সাতটি পোল্ডারের মধ্যে কয়রায় ১৪/১ ও ১৩-১৪/২ নামে দুটি পোল্ডার রয়েছে। স্বাধীনতার পর খুলনার মহকুমা ছিল সাতক্ষীরা। তখন থেকে কয়রায় পাউবোর কার্যক্রম সাতক্ষীরা-২ বিভাগের অধীনে রয়েছে।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সাতক্ষীরা পাউবোর কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে পারেন না। এতে সুবিধা-অসুবিধাগুলো তুলে ধরা যায় না। কোনো অভিযোগ থাকলে প্রথমে খুলনার জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে হয়। পরে তাঁর মাধ্যমে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসককে জানাতে হয়।
পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও দূরত্ব বিবেচনায় কয়রা সাতক্ষীরার অধীনে রয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে কয়রার দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার হলেও খুলনা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। খুলনা পাউবোর পোল্ডারে জনবল সংকটের কারণে কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান। এসব বিবেচনায় কয়রা সাতক্ষীরার অধীনে রয়েছে।
খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফি উদ্দিন বলেন, কয়রায় পাউবোর কার্যক্রম খুলনার অধীনে আনতে এক মাস আগে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগে খুলনা থেকে কয়রার যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সাতক্ষীরার অধীনে দেওয়া হয়েছিল। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। ফলে এখন ওই জেলার অধীনে থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।
পাউবো খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, কয়রায় পাউবোর সাব ডিভিশন তৈরি করে সেখানে একজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply