ফরিদপুরের সালথায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকের অবহেলায় রেহানা বেগম (৪০) নামে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। তাঁদের দাবি, রোকেয়া বেগম নামে ওই পরিদর্শক নিজ বাড়িতে রেহানার গর্ভপাত ও সিজার অপারেশন করলে তিনি মারা যান। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গত শনিবার বিকেলে উপজেলার কানাইড় গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
রেহানা কানাইড় গ্রামের আজিজুল শেখের স্ত্রী। তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়েছে। রোকেয়া বেগম সালথা উপজেলায় মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছে রেহানার পরিবার।
রেহানার বড় মেয়ে রিক্তা আকতার বলেন, এই বয়সে সন্তান জন্ম দেবেন বলে লজ্জায় ছিলেন তাঁর মা। এ অবস্থায় রোকেয়া বেগমের কাছে গেলে গর্ভপাতের পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রোকেয়ার ফরিদপুর শহরের আলীপুরের বাসায় নিয়ে গর্ভপাতের জন্য ওষুধ খাওয়ান। এরপর ব্যথা উঠলে মা ছটফট করতে থাকেন। তিনি নিষেধ করার পরও রোকেয়া কথা শোনেননি। বলেন, ‘কিছু হবে না, ওষুধেই গর্ভপাত হয়ে যাবে।’
রিক্তা আরও বলেন, পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন রোকেয়া। তবে গর্ভপাত না হওয়ায় রাতে অস্ত্রোপচার করেন তিনি। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে শুক্রবার সকালে আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরুর আগেই সকাল ১১টার দিকে তাঁর মা মারা যান। এ ঘটনায় রোকেয়ার শাস্তি দাবি করেন তিনি।
তবে স্বাস্থ্য পরিদর্শক রোকেয়া বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রেহানা বেগমকে তিনি কোনো ওষুধ খাওয়াননি। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে তাঁকে।
অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বার বলেন, রেহানা বেগম তাঁর প্রতিবেশী। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় রোকেয়ার শাস্তি দাবি করেন তিনি।
উপজেলা মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের চিকিৎসা কর্মকর্তা নাহিদা পারভিন বলেন, এ রকম ঘটনা তাঁর জানা নেই। রোকেয়া শনিবার সকালে দু’দিনের ছুটি নিয়েছেন। ঘটনা উপজেলার বাইরে হওয়ায় কিছু বলতে পারছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছেন। চিকিৎসা কর্মকর্তা নাহিদা পারভিনের অধীনে রোকেয়া বেগম কাজ করেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, রেহানা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে তাঁর পরিবার জিডি করেছে। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply