রাঙ্গুনিয়ায় বনাঞ্চল উজাড়ের ফলে খাবারের সন্ধানে বন্য হাতির পালের লোকালয়ে হানা দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে হাতি আসায় নির্ঘুম রাত কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাতির আক্রমণে উপজেলায় এক মাসে তিন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন, নষ্ট হয়েছে ফসল।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন সরফভাটা ইউনিয়নের মীরেরখীল এলাকার আবদুন নবীর ছেলে আবদুর রশিদ (৬০)। গত পাঁচ বছরে মারা গেছেন অন্তত ২০ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক। একই সময়ে অন্তত তিনটি হাতি লোকালয়ে মারা পড়েছে। সর্বশেষ গত ২৮ মে একটি হাতি কাদায় আটকে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
গত বুধবার ভোরে মীরেরখীল গ্রামে হানা দেয় হাতির দল। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ দিলদার বলেন, হাতির পাল কয়েক কৃষকের গোলা ভেঙে ধান খেয়ে সাবাড় করেছে। সারাবছর এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাঁর অভিযোগ, লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে বন বিভাগ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
১ জুলাই রাতে পদুয়া ইউনিয়নের ত্রিপুরা সুন্দরী এলাকায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান আবদুল আজিজ (৬৫) নামে এক কৃষক। ২৬ জুন সন্ধ্যায় মোবারক আলী টিলায় মোহাম্মদ শাহ্ আলম (৫৫) নামে আরেক কৃষকের মৃত্যু হয়। মাসখানেক আগে গিয়াস উদ্দিন (২৭) নামে এক কৃষক আহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ বছরে অনেকের মৃত্যুর পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লোকালয়ে বেশ কয়েকটি হাতিও মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিলেও হাতি আসা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, বনে হাতি চলাচলের নির্দিষ্ট পথ থাকে। সেই পথ বন্ধ হয়ে গেলে তারা লোকালয়ে হানা দেয়। বনভূমি উজাড় ঠেকানোর পাশাপাশি বনে পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করতে হবে।
বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, পাহাড় কেটে বন উজাড় করার ফলে হাতির খাবারের সংস্থান হচ্ছে না। ফলে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বনভূমি উজাড় ঠেকানোর পাশাপাশি হাতির পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করতে হবে। এ বিষয়ে এলাকায় সভা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব মেটাতে বৃহৎ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) শফিকুল ইসলাম বলেন, ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৮ জনকে ১৫-২০ হাজার টাকা এবং মারা যাওয়া দু’জনের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ম অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
Leave a Reply