বানভাসী মানুষের দল জড়ো হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। অসহায় মানুষ খুঁজছে একটু আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু সেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অবস্থা এতই শোচনীয় যে সেখানে রাতযাপনই দায়।
সেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ যা পাওয়া যাচ্ছে, তা অপর্যাপ্ত। জ্বলে না চুলা, নেই স্যানিটেনশন ব্যবস্থা। দুর্বিপাকে অসহায় মানুষ তাই সেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে দূরদূরান্তে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে ছুটছেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর এমনই বেহাল দশা। বৃহস্পতিবার হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের ঘাটের বাজার শেডঘর বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে এমনই দুর্দশা দেখা গেল।
গত ১৯ জুন এই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন বয়োবৃদ্ধা মায়ারুন বেগম ও মরিয়ম বেগম।
মরিয়ম বেগম বলেন, ঘরে পানি উঠে গেছে। আমাদের পরিবারে আরও কেউ নেই। অসহায় দুজন আশ্রয়কেন্দ্রে না এসে কী করব। কিন্তু এখানে এসে দেখি, কোনো চুলা জ্বালানো যায় না। মানুষে গিঁজগিঁজ করছে।
আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার মুহূর্তে আব্দুর রউফ বলেন, এখানে টয়লেটের ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। রাতের বেলায় পরিবারের নারীদের ঘুমানোর সুযোগ দিয়ে পুরুষ সদস্যদের পাহারা দিতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চলে যাচ্ছি।
কুলাউড়ার জয়চন্ডী ইউনিয়নের মীর শঙ্কর প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়, পৌরসভার ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজ, রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে জানা গেছে, সরকারি বা বেসরকারি পর্যায় থেকে যে ত্রাণ পাওয়া গেছে, তা অপর্যাপ্ত।
বানভাসীদের একজন সমকালকে বলেন, চাল-ডাল যা পেয়েছি তা দিয়ে কোনোরকমে দু-একদিন চলতে পেরেছি। গত ৪-৫ দিন খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেছি।
কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনুও পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও হাওর এলাকায় মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি যে ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান কুলাউড়া উপজেলা বিভিন্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এসময় তিনি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মোহাম্মদ আবু জাফর রাজু, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ও ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply