গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ সময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পণ্যমূল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিল্প উদ্যোক্তারা কেউ কেউ বলছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে আরও চাপে পড়বে শিল্প খাত। কারও মতে, বড় বাজেটে ভর্তুকির বোঝা কমাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। মূল্যবৃদ্ধিকে সহনীয় উল্লেখ করে
সরকারকে এ জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। গ্যাসের দর গড়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ। বৃহৎ শিল্পে ঘনমিটারপ্রতি দর বৃদ্ধি করা হয়েছে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা। মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা। ক্ষুদ্র কুটির ও অন্যান্য শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। এ ছাড়া চা শিল্পে দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল রোববার গ্যাসের নতুন দরের ঘোষণা দিয়েছে। ১ জুন থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে।
গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে যৌক্তিক বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মনে করেন, গ্যাসের নতুন দর বৃদ্ধি যৌক্তিক। এফবিসিসিআই মনে করে, দেশের সব ধরনের শিল্প খাতের সক্ষমতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
তবে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান কচি সমকালকে বলেন, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে এখন। রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা-উদ্বেগ আছে। বাস্তবতা বিবেচনায় গ্যাসের দর বৃদ্ধির এটা উপযুক্ত সময় নয়। এমনিতেই কাঁচামালের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির কারণে নিট মুনাফা কমছে পোশাকশিল্পের। এর মধ্যে গ্যাসের দর বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে।
গ্যাসের বর্ধিত দরকে স্বাগত জানিয়েছেন বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেছেন, এ মুহূর্তে সহনীয় হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি একটা বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। কারণ, প্রস্তাবিত মূল্য আরও বেশি ছিল। নতুন দরে অর্থনীতি এবং শিল্প কোনো খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
নিট পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের দর না বাড়ালেই শিল্প খাতের জন্য ভালো হতো। পোশাক উৎপাদনে ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে আগের দরে। সে হিসেবেই ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, গণশুনানিতেই আমরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের অসারতা তুলে ধরেছিলাম। ক্যাবের পক্ষ থেকে একটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল, কোম্পানিগুলোর মুনাফাভিত্তিক কার্যক্রমে হ্রাস টানলে এবং অযাচিত ব্যয় কমিয়ে আনলে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ট্যাক্স-ভ্যাট কমিয়ে আনলে দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সেই প্রস্তাব আমলে না নিয়ে কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখেছে।
বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিবাদ :গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। গতকাল পৃথক বিবৃতি ও সভা-সমাবেশে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা বলেন, মানুষ এমনিতেই নানা সংকটে আছে। এর ওপর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনে নতুন বোঝা চাপাবে। এটা জনগণ মেনে নেবে না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করলে গ্যাসের দাম কমানো সম্ভব। অথচ সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং অপচয় প্রতিরোধ না করে দাম বাড়িয়ে নিজের ব্যর্থতা সাধারণ মানুষের কাঁধে তুলে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন নাজমুল হক প্রধান, মোস্তফা ফারুক, নুর আহমেদ বকুল, শফি আহমেদ, বজলুর রশিদ ফিরোজ, আখতার সোবহান মাশরুর, আমিনুল ইসলাম, মনসুরুল হাই সোহন, সুজাউদ্দিন জাফর, ডা. সরদার ফারুক, মুখলেছউদ্দিন শাহীন, সিরাজুম মুনীর, রেজাউল করিম শিল্পী, রাজু আহমেদ, সালেহ আহমেদ, হারুন মাহমুদ প্রমুখ।
Leave a Reply