বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিশিষ্টজন বলেছেন, গত ১৩ বছরে দেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তবে জনগণের মানস গঠন অনেক দূর পিছিয়ে গেছে। অস্বীকারের উপায় নেই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাঙালিত্বের পরিচয় নয়, ধর্মীয় পরিচয় আজ ব্যক্তি, সমাজ, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রজীবনে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট উত্তরণে বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরও শাণিত করতে হবে। নয়তো বিপর্যয় অনিবার্য, যে বিপর্যয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে ও মনীন্দ্র কুমার নাথের পরিচালনায় সভায় ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: প্রসঙ্গ চুকনগর গণহত্যা’ শীর্ষক নিবন্ধ পাঠ করেন ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দেশ আজ যোজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেই প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। মানবচেতনার উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নয়নকে টেকসই করতে হবে। সমাজে যে গলদ দেখা দিয়েছে, তার অবসানে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, পাঠ্যপুস্তক হেফাজতের দখলে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করা যাবে না। খুদে পাকিস্তান আমরা মেনে নেব না।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির একটিও বাংলাদেশে নেই। বড় পাকিস্তান ভেঙে ছোট পাকিস্তান গড়ার জন্যই কী আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? আফগানিস্তান বাংলাদেশের দিকে শ্বাস ফেলছে। তাহলে কী বাংলাদেশ আফগানিস্তান হতে চলেছে? বাংলাদেশকে একচুলও পিছিয়ে আনা যাবে না।
রেখা চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে রেখে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন সম্ভব নয়। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া ছাড়া আজ কোনো বিকল্প নেই।
অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নামের সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি এই সংগঠন গঠনে বাধ্য করেছে। এটি আপামর বাঙালি জাতির জন্য লজ্জার। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পরও জিয়া-এরশাদের প্রেতাত্মা থেকে গোটা দেশ ও জাতি আজও মুক্ত হতে পারেনি।
সভার শুরুতে ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা কবি-সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জয়ন্ত কুমার দেব। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। পরে ঐক্য পরিষদের ওপর ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রদর্শন করা হয়।
Leave a Reply