নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প ‘স্বপ্ননগর’। মুজিববর্ষে গড়ে তোলা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলারসুর গ্রামে অবস্থিত এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৩০০ ঘর মধুমতীর ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।
গত ৩ বছরে স্থানীয় চারটি ইউনিয়নের ৬০০ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে মধুমতী নদীতে। বর্তমানে সেখানকার প্রায় ১ হাজার পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে। নদীতীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর দ্রুতই নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন নদী পারের বাসিন্দারা। নদীতীর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে তাঁরা কয়েকবার মানববন্ধন করলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। মধুমতীর ভাঙনে বাজড়া গ্রামের পুরোনো একটি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। গোপালপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল খোলাবাড়িয়া। এখন পুরো গ্রামটিই মধুমতী নদীতে চলে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলারসুর ও পগনবেগ- এই পাঁচটি গ্রামে মধুমতী নদীর ভাঙনের মাত্রা সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া আশপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারানদিয়া ও পাড়া-গ্রামসহ পাশের পাঁচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও মধুমতীর ভাঙন চলছে। বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। এই ইউনিয়নের কাতলারসুর গ্রামে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্প। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৮৬ জন বাসিন্দার কাছে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। দুই বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদীভাঙনে ঘর হারানো আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তাঁরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটু আশ্রয় পেয়েছিলেন। এখন এই আশ্রয় হারালে তাঁদের আবার পথে পথেই থাকতে হবে।
ছাতিয়াগাতি গ্রামের মুকুল হোসেন বিশা মিয়া বলেন, পৈতৃকসূত্রে তাঁদের প্রায় ৩০ একরের বেশি জমি ছিল মধুমতীর তীরে। এখন প্রায় সবই শেষ, শুধু ভিটেটুকু বাদে। তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাপদাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে যদি ভাঙনরোধ করা না যায়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, মধুমতীর এই ভাঙন নিয়ে বহুবার জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় বলা হয়েছে। নদী শাসন না করায় এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মুজিববর্ষের উপহার জেলার সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প স্বপ্ননগর এখন হুমকির মুখে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার একাধিকবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরও প্রায় হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে- এটিই প্রত্যাশা।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, দু-তিন বছর হলো আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অন্যান্য সম্পদের যাতে আর ক্ষতি না হয়, সে জন্য আবারও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ জানাব।
Leave a Reply