ভোলায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের পথে পথে নানা ভোগান্তির পর ঘাটে নেমেও পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। তাদের জিম্মি করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে অটোরিকশাচালকরা।
ছুটির দ্বিতীয় দিন শনিবার তিনটি নৌপথে ভোলায় লক্ষাধিক মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। প্রতিটি লঞ্চ ভোলার ঘাটে ফিরেছে ধারণক্ষমাতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে।
ঘাটে নেমে অটোরিকশায় বেশি ভাড়ার কারণে কম আয়ের মানুষ যথাময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জেলা পুলিশ। পথে পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার ভোর থেকে একের পর এক লঞ্চ আসে ভোলার ইলিশা ঘাটে। প্রতিটি লঞ্চেই ছিল অতিরিক্ত যাত্রী।
ঘাট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি লঞ্চেই তিন থেকে চার হাজার করে যাত্রী ছিল। যাত্রীদের অভিযোগ, গ্রিনলাইনের মতো দ্রুতগামী নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। টিকিট কেটে ওঠা যাত্রীদের প্রায় ৫ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে আনা হয়েছে, যা যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। অন্য লঞ্চগুলোতেও ছিল একই অবস্থা। ডেকের যাত্রীদের কাছ থেকে একশ থেকে দুইশ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে।
ঘাটে নেমেও স্বস্তি নেই যাত্রীদের। শত শত অটোরিকশা থাকলেও তারা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ঢাকা থেকে সপরিবার ঈদ করতে আসা রফিকুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী গ্রামে। দুইশ টাকার অটো ভাড়া তার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে এক হাজার ৩শ টাকা। তীব্র গরমে নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি হয়েছেন রফিকুল।
ইলিশা ঘাট থেকে সদর উপজেলার ভেদুরিয়া বাজার পর্যন্ত অটোরিকশা ভাড়া দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। শনিবার সকালে এক হাজার দুইশ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরেছে ঢাকা থেকে আসা গার্মেন্টকর্মী রোজিনা খাতুনের পরিবার। ইলিশা ঘাট থেকে জেলা শহরের জনপ্রতি অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা। শনিবার তা আদায় করা হচ্ছে যাত্রীপ্রতি একশ টাকা হারে। তাও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে ধারণক্ষমতার বেশি। ঢাকা থেকে ভোলার ইলিশা আসতে যে ভাড়া গেছে, ইলিশা ঘাট থেকে বাড়ি পৌঁছতে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ অসংখ্য যাত্রীর।
দুপুরে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ইলিশা ঘাট পরিদর্শনে গেলে এমন অভিযোগ করেন যাত্রীরা। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক চেকপোস্ট বসিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। যাত্রীদের চলাচল নিবির্ঘ্ন করতে প্রতিটি ঘাটে পুলিশের বিশেষ টিম বসিয়ে তদারক করা হচ্ছে। দুস্কৃতকারী চিহ্নিত করতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া পুলিশ শহরের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সব পদক্ষেপ নেবে।
বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ভোলা রুটে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি লঞ্চ চলাচল করছে। ইলিশা, ভোলা খেয়াঘাট, হাকিমুদ্দিন, বেতুয়া, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, ঘোষেরহাট ও মনপুরা রুটে এসব লঞ্চ চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি লঞ্চই অতিরিক্ত ট্রিপ দিচ্ছে। ইলিশা মজুচৌধুরীর রুটে চারটি লঞ্চ ও চারটি সি-ট্রাক বিরতিহীন যাত্রী পারাপার করছে। এ ছাড়া ভোলা-বরিশাল রুটে ১৩টি লঞ্চ প্রতি ঘণ্টায় যাতায়াত করছে। অতিরিক্ত টাকা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারক করছে। এ সময় বিষয়টি দেখার মতো জনবল তার নেই।
Leave a Reply