উজানের ঢলে মেঘনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মেদির হাওরের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এই উপজেলার ধইল্যা বিল, তিতাজুরি বিল, খাসারচর বিলের কাঁচা ধানও তলিয়ে গেছে পানিতে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, নাসিরনগরে বিভিন্ন হাওরে এ বছর প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। উজানি ঢলে উপজেলার গোয়ালনগর ও সদর ইউনিয়নের হাওর-বিল মিলিয়ে ২৫০ হেক্টর জমির কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন হাওরে কৃষকরা কোথাও হাঁটু পানি কোথাও কোমর পানিতে নেমে কাঁচা ধান কাটছেন। বোরো ধানের ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখলেও গত সপ্তাহের শিলা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবের মুখ দেখবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের কদমতলী ও সোনাতলা গ্রামের ধইল্যা বিলে প্রায় ৫০ হেক্টর, মাইজখোলা গ্রামের তিতাজুরি বিলে ২৫ হেক্টর, জামারবালি গ্রামে খাসারচর বিলে প্রায় ২৫ হেক্টর, রামপুর ও নোয়াগাঁওয়ের মেদির হাওরে প্রায় ১০০ হেক্টর ব্রি-২৮ ও ব্রি-১৭ পাকা ধান তলিয়ে গেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের টেকানগর, নাসিরপুর ও সদরের মেদির হাওরের প্রায় ৫০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে কুন্ডা, গোকর্ণ ও হরিপুরের তিতাস নদীর তীরবর্তী আকাশি হাওর।
এভাবে আর দুদিন পানি বাড়তে থাকলে তিতাস পাড়ের আকাশি হাওরও তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীরা।
হাওর পাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, গত ২০ বছরেও এপ্রিল মাসে মেঘনার পানি এত বৃদ্ধি পেতে দেখেনি।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরের মেঘনা নদীতে গত দুই দিনে মেঘনায় প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে শিলা বৃষ্টি ও মেঘনায় পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ১০০ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রামপুর গ্রামের সোহেল মিয়া বলেন, ‘যেভাবে নদীতে পান বাড়ছে তাতে ধানের খড় কাটতে পারব কিনা সেই চিন্তায় আছি। ধান কাইটাও লাভ নাই। পানির নিচে চলে গেছে হাওরের রাস্তা। নৌকাও চলে না। মাথায় করে এত দূরে ধান নেওয়া সম্ভব না।’
কৃষক শহীদ মিয়া বলেন, ‘গত চার দিন আগেও আমাদের হাওরে পানি ছিল না। কিন্তু দুইদিন ধরে উজানের পানি আইসা সব পানির নিচে ডুবাই দিছে। পানির নিচ থেইক্যা যে ধান কাটতাছি ইতাও নিতাম পারতাছিনা। কারণ আমাদের রাস্তা পানির নিচে ডুইব্যা গেছে। অল্প পানিতে নৌকাও চলে না ‘
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ তারেক বলেন, ১৩টি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করছে। পানি আরও বাড়তে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। তাই কৃষক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, দ্রুত সময়ে নিচু এলাকার ধান কেটে ঘরে তুলতে।
Leave a Reply