প্রায় এক বছর পর দুই মেয়ের দেখা পেয়েছেন ‘রিকাশাচালক’ বাবা ইদ্রিস আলী। যদিও দেখা পেয়েছেন, কিন্তু এখনোই তাদের কাছে পাবেন না। পুলিশ জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী রোববার তাদের আদালতে তোলা হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আদালতই দেবেন।
শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় পুলিশের করা সংবাদ সম্মেলনে দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় বাবার। এর আগে বিকেলে ফতুল্লার মুসলিম নগর এলাকা থেকে ইদ্রিসের বড় মেয়ে ইতি আক্তার (৯) ও মীমকে (৫) উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। তারা সেখানে তাদের নানির বাসায় ছিল।
শনিবার সন্ধ্যায় ফতুল্লা থানা মিলনায়তনে ইদ্রিস যখন দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন, ছোট মেয়ে মীম তখন বাবার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ছোট মেয়ে যেন বাবার মুখ মনে করতে পারছিল না। যদিও বাবাকে কাছে পেয়ে চোখ ছলছল করছিল বড় মেয়ের।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইদ্রিসের দুই মেয়ে তাদের নানির কাছে ছিল। তাদের মা শাহনাজ বেগম এক বছর আগে দুই মেয়েসহ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে সৌদি আরব চলে যান। বিদেশ যাওয়ার আগে ইদ্রিস ও শাহনাজের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। শিশু দুটিকে আদালতে পাঠানো হবে। আদালত তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
ফতুল্লা থানার উপপরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর একটি মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে শনিবার দুজনকে উদ্ধার করা হয়।
মেয়েদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত বাবা ইদ্রিস সংবাদমাধ্যমকে জানান, মেয়েরা ভালো আছে দেখে তিনি শান্তি পাচ্ছেন। বাড়ি থেকে আসার সময় ছোট মেয়ের বয়স ছিল সাড়ে তিন বছর। দীর্ঘদিন দূরে থাকার কারণে মেয়ে তাকে চিনতে পারছে না।
এর আগে ইদ্রিস জানিয়েছিলেন, এক বছর আগেও স্ত্রী শাহানাজ আর দুই মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। এরই মধ্যে একদিন গ্রামের দালালের খপ্পরে পড়েন তার স্ত্রী। তারপর তিনি বিদেশে যেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। বাদ সাধেন ইদ্রিস। ছোট্ট মেয়েদের ফেলে বিদেশ যেতে বাধা দেন স্ত্রীকে। কিন্তু বাধা মানতে চান না স্ত্রী। একরাতে পালিয়ে বাড়ি ছাড়েন স্ত্রী। সঙ্গে নেন দুই মেয়েকেও। তখন থেকেই ঢাকা নারায়ণগঞ্জ আর গাজীপুরের অলিগলি ঘুরে স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজতে থাকেন। প্রিয়জনদের খুঁজতে এসে দিনাজপুরের কৃষক ইদ্রিস ভাগ্যের বিড়ম্বনায় হয়ে যান ‘রিকশাওয়ালা’।
তিনি জানান, দালালের লোকজনই বলাবলি করছিল তার স্ত্রী মেয়েদের শহরে রেখে বিদেশে চলে গেছে। সে কথা শুনেই প্রথমে ঢাকা, পরে গাজীপুরে যান তিনি। নিজের খরচ চালাতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। আর বাকি সময় স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজেন। প্রায় এক বছরেও সন্তানদের খুঁজে পাননি। এরই মধ্যে সম্প্রতি তার মুঠোফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনে কথা হয় বড় মেয়ের সঙ্গে। মেয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আকুতি জানায়। জানতে পারেন, মেয়েরা তার শাশুড়ির কাছে আছে। শাশুড়ি নারায়ণগঞ্জের বিসিক এলাকায় কোনো এক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। ইদ্রিস তখনই ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জে। যদিও শেষবার মেয়ের সঙ্গে কথা বলার পর থেকেই সেই মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পান।
এই ব্যাপারে ইদ্রিসের শাশুড়ি আকলিমা বেগম জানান, শাহনাজের বিদেশ যাওয়া নিয়ে ইদ্রিসের সঙ্গে ঝামেলা তৈরি হয়। তারপর শাহনাজ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে ইদ্রিসকে তালাক দেয়। এখন তার মেয়ে সৌদি আরব আছেন। দুই নাতনিকে তিনি নারায়ণগঞ্জে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন।
Leave a Reply